Nandalal Bose’s House
নন্দলাল বসুর বাড়ি
নন্দলাল বসু ও পশুপতি বসু — উত্তর কলকাতার বাগবাজার নিবাসী জমিদার ভ্রাতৃদ্বয়। বিশাল প্রাসাদোপম যৌথ বাড়ি অগ্রজ ভ্রাতার নামানুসারে ‘নন্দ বসুর বাড়ি’ নামে খ্যাত ছিল। নন্দলাল বসুর বাড়িতে অনেক ‘ঈশ্বরীয় ছবি’ আছে শুনে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণদেব সেই ছবিগুলি দেখবার জন্য ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দের ২৮ শে জুলাই একবার কয়েকজন ভক্তসহ এই বাড়িতে শুভাগমন করেন। বলরাম বসুর বাড়ি থেকে সেইদিন তিনি পালকি করে এখানে এসেছিলেন। তাঁর পরনে ছিল লাল ফিতেপাড় ধুতি, উত্তরীয় বিহীন, পায়ে কালো বার্ণিশ করা চটি জুতো। ‘কথামৃত’ – এর বিবরণ অনুযায়ী — ” নন্দ বসুর গেটের ভিতর পালকি প্রবেশ করিল। ক্রমে বাটীর সম্মুখে প্রশস্ত ভূমি পার হইয়া পালকি বাটীতে আসিয়া উপস্থিত হইল। গৃহস্বামীর আত্মীয়গণ আসিয়া ঠাকুরকে প্রণাম করিলেন। ঠাকুর মাস্টারকে চটিজুতা-জোড়াটি দিতে বলিলেন। পালকি হইতে অবতরণ করিয়া উপরের হলঘরে উপস্হিত হইলেন। অতি দীর্ঘ ও প্রশস্ত হলঘর। দেবদেবীর ছবি ঘরের চতুর্দিকে। গৃহস্বামী ও তাঁহার ভ্রাতা পশুপতি ঠাকুরকে সম্ভাষণ করিলেন। ক্রমে পালকির পশ্চাৎ পশ্চাৎ আসিয়া ভক্তেরা এই হলঘরে জুটিলেন। … ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এইবার ছবি দেখিতে গাত্রোত্থান করিলেন। সঙ্গে মাস্টার ও আরও কয়েকজন ভক্ত।গৃহস্বামীর ভ্রাতা শ্রীযুক্ত পশুপতিও সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া ছবিগুলি দেখাইতেছেন। “ছবি দেখা সমাপ্ত হলে ঠাকুর নন্দলাল বসুকে বলেছিলেন — “আজ খুব আনন্দ হল।” এর পর উভয় ভ্রাতার প্রশ্নের উত্তরে অনেক উপদেশ দানান্তে ঠাকুর সেদিন সেখান থেকে গোলাপ-মার বাড়ি গিয়েছিলেন।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সম্পত্তি ভাগ হলে পশুপতি বসুর মালিকানায় যে অংশটি পড়ে, সেই অংশেরই দোতলার হলঘরে ছবিগুলি দেখার জন্য ঠাকুরের পদার্পণ হয়েছিল। দুঃখের বিষয়, বর্তমাণে সেই দুর্লভ ছবিগুলি সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পশুপতি বসুর বংশধরেরাও আর এই বাড়িতে বাস করেন না। বর্তমানে এই অংশটি পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক অধিকৃত। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন এখানে ‘শ্রীরামকৃষ্ণ ডে স্টুডেন্টস হোম’ স্থাপিত হয়েছে। দোতলার যে হলঘরে ঠাকুরের পদধুলি পড়েছিল, সেই ঘরে বর্তমানে একটি গ্রন্থাগার স্থাপিত আছে।
* ঠিকানা — ৯, পশুপতি বসু লেন, বাগবাজার, কলকাতা – ৩
* পথনির্দেশ — উত্তর কলকাতায় বিধান সরণি থেকে পশ্চিমমুখে বাগবাজার স্ট্রিটের উপর অবস্থিত ‘মালটিপারপাস স্কুল ফর গার্লস’ বাড়িটির উত্তর-পশ্চিম গায়ের পাশ দিয়ে ডান দিকে উত্তরমুখী রাস্তা পশুপতি বসু লেনে ঢুকে সামান্য এগোলেই বাঁদিকে এই বাড়ি।